ভাষা আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ - পর্ব ৩
ভাষা আন্দোলন বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাবিতে সংগঠিত গণআন্দোলন। ১৯৪৭ সালে সৃষ্ট নব্য পাকিস্তানে ৫৬ শতাংশ মানুষের ভাষা ছিল বাংলা। অন্যদিকে শুধু ৩.২৭ শতাংশ মানুষ কথা বলত উর্দুতে। সেই উর্দুকেই পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্রভাষা করার জন্য জোর পাঁয়তারা শুরু করে। ভাষা-একটি জাতির যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। এটি শুধু চিন্তা-চেতনা, মনন ও মনের ভাব প্রকাশের কেবল মাধ্যমই নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশ ও জাতির আত্মপরিচয়। হাজার বছর ধরে বাংলা ভাষা প্রকাশ করে যাচ্ছে বাঙালি জাতির অস্তিত্ব ও স্বকীয়তা। মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে তৎকালীন পাকিস্তান অধিরাজ্যের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদাবির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। মায়ের ভাষা বাংলা রক্ষার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাজপথে আন্দোলনে নামে বাংলার দামাল ছেলেরা। পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান সালাম-বরকত-রফিক-শফিক-জব্বার আরও কত নাম না-জানা কত শহীদ। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা ফিরে পাই আমাদের প্রাণের ভাষা, মায়ের মুখের বুলি, মধুর ভাষা বাংলা। বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশে) সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন।
"ভাষা আন্দোলন" বিসিএস, ব্যাংকসহ পিএসসির বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষায় প্রিলিমিনার, ভাইভা ও রিটেনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি টপিক। প্রতি বছর বিসিএস, ব্যাংকসহ পিএসসির বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষার প্রিলিমিনারি পর্বে "ভাষা আন্দোলন" টপিক থেকে অন্তত একটি প্রশ্ন আসবেই। যদি ভাগ্য ভালো থাকে, তাহলে আরো বেশি প্রশ্ন তো পাবেনই। তাই বিসিএস, ব্যাংকসহ পিএসসির বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষায় "ভাষা আন্দোলন" থেকে আসা প্রশ্নের সঠিক উত্তর যাতে নিশ্চিত করতে পারেন, তাই ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন সালভিত্তিক উল্লেখযোগ্য ঘটনাপ্রবাহের বর্ণনা নিয়ে আমি এই "ভাষা আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ" ব্লগটি শুরু করতে যাচ্ছি। যেহেতু "ভাষা আন্দোলন" অনেক বিস্তৃত একটি আন্দোলন। তাই ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল তথ্যকে কয়েকটি পর্বে ভাগ করে এই ব্লগটিকে সাজাবার চেষ্টা করব। আশা করি, এই পর্বগুলোর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে গেলে বিসিএস, ব্যাংকসহ পিএসসির বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি থেকে শুরু করে লিখিত ও ভাইভার জন্যেও একটা ভালো প্রিপারেশন হয়ে যাবে। যাইহোক কথা না বাড়িয়ে, শুরু করি "ভাষা আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ - ৩য় পর্ব"। এখানে ভাষা আন্দোলন পরবর্তী ১৯৫৩ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের সাথে সম্পর্কযুক্ত ঘটনাবলির বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।
ভাষা আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ - ১ম পর্ব ও ২য় পর্ব দেখে না থাকলে নিচে ক্লিক করুন
ভাষা আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ - পর্ব ১
ভাষা আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ - পর্ব ২
১৯৫৩
২১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী “শহিদ দিবস” পালন হয়।
১৯৫৪
৯ মে পাকিস্তান গণপরিষদ বাংলাকে দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। [গজা]
১৯৫৫
৩ডিসেম্বর(১৭ অগ্রহায়ণ ১৩৬২) ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ১ম প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা
মূল উদ্যোক্তাঃ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
১৯৫৬
১৯৬১
১৯মে আসামে বাঙালিরা “অসমীয়” ভাষার পাশাপাশি বাংলাকে সরকারি ভাষা হিসেবে গ্রহণের জন্য মিছিল করলে পুলিশ গুলি চালায় যাতে ১১ জন নিহত হন।
ঐ বছরই বাংলাকে গ্রহণ করা হয়।
১৯৬৬
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা পঞ্জিকা সংস্কার করেন।
১৯৭৪
২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে প্রথম বারের মতো বাংলা ভাষায় ভাষণ প্রদান করেন।
১৯৭৫
১২ মার্চ সরকারি কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ জারি করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
আদেশে বলা হয় সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও আধা সরকারি অফিসে বাংলা নথি ও চিঠিপত্র লিখতে হবে।
১৯৮৭
১৯৮৭ সালের জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের নিমিত্তে জাতীয় সংসদে আইন পাস হয়।
৮ মার্চ ‘বাংলা ভাষা প্রচলন আইন’ কার্যকর করা হয়।
১৯৯৭
৫ অক্টোবর দেশের বাইরে প্রথম শহিদ মিনার নির্মিত হয় - এডিনবার্গ, ওল্ডহ্যাম, যুক্তরাজ্য
[যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থিত ম্যানচেস্টার ওল্ডহ্যামের ওয়েস্টউড নেবারহুড নামক স্থানে]
১৯৯৯
১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর ৩০তম/৩১তম সাধারণ অধিবেশনে(প্যারিস অধিবেশন) ২১ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
ইউনেস্কোর সেই অধিবেশনে এই দিবস পালনের মূল প্রস্তাবক ছিল বাংলাদেশ ও সৌদি আরব
২০০০
২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবস উদযাপন শুরু হয়। (১৮৮টি দেশ একত্রে পালন করে)।
২০০১
- ১৫ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের উপস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
২০০৩
UNESCO ২০০৩ সালে একুশে পদক লাভ করে।
২০০৫
বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে বিদেশে নির্মিত প্রথম শহিদ মিনারটি অবস্থিত জাপানের রাজধানী টোকিও - এর ইকেবুকুরো নিশিগুচি পার্কে।
২০০৮
৫ ডিসেম্বর জাতিসংঘ তাদের ৬৩তম সম্মেলনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
২০১০
২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সেগুনবাগিচাস্থ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ভবনের পাশেই ১.০৩ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট-এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইউনেস্কোর ৩৮তম অধিবেশনে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটকে ইউনেস্কোর ক্যাটাগরি-২ ইনস্টিটিউটে উন্নীত করার প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হয়েছে।
এখানে গবেষণাধীন ভাষাঃ ১২টি
২০১১
১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজের ২য় তলায় উদ্বোধন করেন ভাষা আন্দোলনের জাদুঘর/একুশের জাদুঘর।
পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনের সরকারি বাসভবনের নাম ছিল - বর্ধমান হাউজ। এটি বর্তমানে বাংলা একাডেমি নামে পরিচিত।
২০১৫
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অর্জনের উদ্যোক্তা কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম একুশে পদক পান।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন